রংপুরে ভরা বর্ষায় সেচ সংকটে পড়েছে রোপা আমনের আবাদ। এখন পর্যন্ত ৩০ ভাগ জমিতেও চারা লাগাতে পারেননি কৃষক।
একই কারণে জাগ দেওয়া যায়নি উৎপাদিত পাটের অর্ধেকও। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে বাড়তি খরচের বোঝা টানতে হচ্ছে কৃষককে।
শ্যালো মেশিনে টানা ৪/৫ ঘণ্টা পানি সেচে ২৪ শতাংশের এক খণ্ড জমি হাল-চাষ দিয়ে চারা রোপনের জন্য তৈরি করতে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টার জন্য কৃষককে গুনতে হচ্ছে একশ টাকা। অথচ এখন ভরা বর্ষাকাল।
শ্রাবণ মাসের অর্ধেক পেরিয়েও গেছে। কিন্তু এ ভরা বর্ষাতেও স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই রংপুরসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। কখনো টিপ টিপ, কখনো একপশলা বৃষ্টি হচ্ছে।
এতে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রামের কৃষকরা আমন ধান চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়েও কৃষকের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
রংপুর কৃষি বিভাগ বলছে, আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা পাচ্ছেন না কৃষক। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে জমিতে সেচ দিতে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে। আবার জমিতে আগাছা, রোগ ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যাবে। এতে ধানের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সঙ্গতি আছে এমন কৃষকেরা ডিজেল বা বিদ্যুৎ খরচ করে জমি তৈরি করে চারা রোপন করতে পারছেন। কিন্তু সামর্থ্যহীন কৃষকের জমি পড়ে আছে।
এদিকে খালের পানিতে পাটের জাগ দিয়েছেন একদল কৃষক। জমি থেকে কেটে আনা কাঁচা পাটের স্তূপ ফেলে রেখে অপেক্ষায় আছে আরেক দল পাটচাষী। জল ও জলাশয়ের সংকটে অর্ধেক পাট পঁচানো যায়নি এখনো।
এক কৃষক জানান, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। গাড়ি ভাড়া করে অনেক দূরে নিয়ে যেতে হচ্ছে পাট জাগ দিতে অন্য জায়গাতে। এখানেও বাড়তি খচর হচ্ছে আমাদের।
আরেক কৃষক জানান, বৃষ্টি নেই পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এখন কী করব, চিন্তায় আছি।
ভরা বর্ষায় বৃষ্টির অভাবে সেচ সংকটের কথা স্বীকার করে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৭ ভাগ জমিতে রোপা আমন লাগানো এবং অর্ধেক পাট জাগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহবুবর রহমান বলেন, বৃষ্টির সময় এখনো রয়েছে। তবে কৃষকদের বলব- উচু জমিতে যেন সেচ দিয়ে ধান রোপন করেন। এটা ঠিক, এতে তাদের একটু কষ্ট হবে। বৃষ্টি হলে তাদের জন্য কাজটি করা অনেক সহজ হতো।
কৃষি বিভাগ বলছে, প্রায় ৬ লাখ সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টরে চারা রোপন করা সম্ভব হয়েছে। আর সাড়ে ৫৬ হাজার হেক্টর জমির পাটের মধ্যে সাড়ে ২৮ হাজার হেক্টর জমির পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
Leave a Reply