বিয়ের দিনের বখাটে যুবকের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত কিশোরী তারমিনা খাতুন ফুলতি চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হার মানল। রোববার (১ আগস্ট) ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেলে সে মারা যায়।
বুধবার (২৮ জুলাই) সন্ধায় রংপুরের বদরগঞ্জ সাজানোগ্রামের আবু তোয়াব তার কিশোরী মেয়ে তারমিনা খাতুন ফুলতির বিয়ে ঠিক করেছিলেন পার্শ্ববর্তী নাগেরহাটের আবু সাঈদের ছেলে সাকিরুল ইসলামের সঙ্গে। কিন্তু এদিন ভোর রাতে বখাটে যুবক সাখাওয়াত হোসেন ফুলতিকে ঘুম থেকো ডেকে তুলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। প্রায় ৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রোববার ভোরে রংপুর মেডিকেলে সে মারা যায়।
রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে ফুলতির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে নেওয়া হয়। সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফুলতির বাবা আবু তোরাবসহ আত্মীয়-স্বজনেরা। আবু তোরাব আহাজারি করে বলছিলেন, বখাটে সাখাওয়াতের হাত থেকে বাঁচাতে মেয়েটিকে অল্প বয়সেই বিয়ে দিতে চাইলাম। তারপরও মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।
ফুলতি স্থানীয় মন্ডলেরহাট দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বিছানায় জবানবন্দি দিয়েছে সে। জবানবন্দিতে সাখাওয়াত হোসেন কীভাবে তারওপর ধারালো ছুরি দিয়ে হামলা করেছে, তার বর্ণনা দিয়েছে।
জবানবন্দিতে ফুলতি বলেছে, বুধবার ভোর ৫টার দিকে সাখাওয়াত যখন মোটরসাইকেল নিয়ে তার বাড়িতে আসে তখন বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে ছিল। তার ডাকে ঘুম থেকে জেগে দরজা খুলে ফুলতি বের হতেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ে। চিৎকার করে সে বলতে থাকে তোকে আমি না পেলে আর কেউ তোকে পাবে না।
পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী জানায়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফুলতির মুখ, মাথা, পেট, উরুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্দয়ভাবে কুপিয়ে মোটরসাইকেলে করে সেদিন পালিয়ে যায় সাখাওয়াত হোসেন। তারা এসে দেখেন দরজার সামনে পড়ে কাতরাচ্ছিল। তার সারা শরীর রক্তাক্ত ছিল।
বখাটে সাখাওয়াত ফুলতির বড় বোন তাহমিনার স্বামী হামিদুরের আপন ভাগ্নে। পাশের মিঠাপুকুর উপজেলার পশ্চিম বড়বালা গ্রামে দুলাভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কয়েক মাস আগে সাখাওয়াতের কুনজরে পড়ে ফুলতি। সাখাওয়াতের বাবার নাম মোনায়েম হোসেন।
ফুলতির মামা নূর আলম জানান, বারবার প্রেমের প্রস্তাব দিলেও সাখাওয়াতের কথায় রাজি হয়নি ফুলতি। পরে সে পরিবারের কাছেও বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্ত আত্মীয়তার কারণে বিয়ের সম্পর্ক না মেলায় তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল ফুলতির পরিবার।
বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করছেন। তিনি জানান, খুনি সাখাওয়াতকে ধরতে অভিযান চলছে।
বুধবার এই ঘটনায় বাদী হয়ে ফুলতির মামা নূর আলম বদরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। এই মামলাই এখন হত্যামামলায় রূপান্তর হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।