মোঃ সাজু মিয়া,
কালীগঞ্জ(লালমনিরহাট)
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে না দেয়ায় আমিনা আক্তার (২৯) নামের এক গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ভোটমারী ইউনিয়ের গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) রফিকুল ইসলাম নামে এক স্বামীর বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের স্বীকার ওই গৃহবধূ ৭ আগস্ট সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্তরা প্রায় সময়ই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতো তাকে। নির্যাতনের সময় তারা বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে আহত করে।
তাদের মারপিটে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান বলেও জানান ওই গৃহবধূ। তারপর পল্লী চিকিৎসক দ্বারা কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি বাদী হয়ে স্বামী গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম সুমন (৩৩ ) ও শ্বশুড় নুর ইসলাম (৫৬) কে আসামি করে গত ৩ জুলাই রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২।
মামলা দায়েরের পর ১৩ জুলাই কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরজু মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের তৎপরতায় এসআই মাহবুব রহমান মামলার দুই আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠান।
মামলাসূত্রে জানা যায়, ১২ বছর পূর্বে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক দক্ষিণ মুসরত মদাতী এলাকার বাসিন্দা আমিন উদ্দিনের মেয়ে আমিনা আক্তার শিল্পির সঙ্গে একই উপজেলার উত্তর শ্রুতিধর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের সুখের কথা ভেবে আমিন উদ্দিন দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং মেয়ের ব্যাবহারের জন্য তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার যার মুল্য অনুমান এক লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার টাকা গ্রাম পুলিশের হাতে দেন।
বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে গ্রাম পুলিশ রফিকুল। যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় স্ত্রীকে বিভিন্ন সময়ে শারিরীক ভাবে নির্যাতন চালায় সে। এই নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য শালিস বৈঠকও হয়। তাদের সংসারে ১১ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। একাধিকবার শালিস বৈঠক হলেও ওই গ্রাম পুলিশ রফিকুলের কোন পরিবর্তন হয়নি। নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকে। যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় গৃবধুর উপর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন
। এরই এক পর্যায় গত ১২ মে গ্রাম পুলিশ রফিকুলের বাবার সহযোগিতায় আবারও যৌতুকের জন্য চাপ দেন। গৃহবধূ যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করায় ওই গ্রাম পুলিশের বাবার হুকুমে স্ত্রীকে মারপিটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখম করে। এতেও ক্ষান্ত হয়নি ওই গ্রাম পুলিশ। পরে ওই গৃবধুর চুলের মুঠি ধরে তার বাবা নুর ইসলাম টানা হেচড়া করে। এসময় ওই গৃহবধূর চিৎকারে মামলার এজাহারে উল্লেখিত স্বাক্ষীগন ছুটে এলে স্বাক্ষী ও স্থানীয়দের সামনেই গ্রামপুলিশ রফিকুল হুমকি দিয়ে বলেন তার দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না দিলে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করিবে।
পরে স্থানীয় ইব্রাহিমের সহযোগিতায় ওই গৃহবধূকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে তার বাবার বাড়ীতে নিয়ে আসে। উক্ত মামলার প্রধান আসামী গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম সুমন এবং তার বাবা নুর ইসলাম ১৩ জুলাই গ্রেফতারের পর গত ২৬ জুলাই জামিনে মুক্ত হন।
গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন পররিষদে বেশ কিছুদিন অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভোটমারী ইউপি চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেন চৌধুরী।
এ বিষয় কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরজু মোঃ সাজ্জাদ হোসেন মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
Leave a Reply