মোঃ সাজু মিয়া
কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধিঃ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে স্বামীকে হারিয়ে ছেলে-মেয়েদের মুখে দু’বেলা দুমুঠো খাবারের জন্য বিশ বছর ধরে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে বেড়াচ্ছেন হতদরিদ্র এক বৃদ্ধা। মানুষের বাড়ি বাড়ি হাত পেতে যা আসে তা দিয়েই দুঃখে-কষ্টে অতিবাহিত হচ্ছে তার দিনাতিপাত।
আজ,শনিবার (১৫ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাররটি পুরনো ছিদ্র টিন দিয়ে একটি ঝুপড়ি ঘর। সেটি থাকার যোগ্য নয়। শুধু নাম মাত্রই ঘর। ঘরের ভেতর রাত কাটানোর মতো নেই কোন বিছানা। ঘুমাতে হয় ভাঙ্গা একটি বিছানায়। বৃষ্টি হলে সেই ঝুপড়ি ঘরে থাকা যায় না। ফলে ঘুমোনোর জন্য আশ্রয় নিতে হয় অন্য কারও বাড়িতে।
তিনি জীবিকার তাগিদে সারাদিন ঘুরেন অন্যের দুয়ারে দুয়ারে। টিনের ঝুপড়ি হলেও উপরের পুরোনো টিন অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে ভরা। ফলে দিনের বেলায় সূর্য শিখা এবং রাতে খোলা আকাশের তারা স্পষ্ট ভাবে চোখে পড়ে। তারপরও তার খোঁজ রাখেন না জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন জানান, কেমন অসহায় এই জননি তার সন্তানরা এক বারোও ভাবেনি! কোথায় থাকবে তার মা। কোথায় থাকবে তার রেখে যাওয়া শিশুটি। যুবক তিন ছেলে থেকে ও কারো কাছে হয়নি তার ঠাই!
এমন পরিস্থিতে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার সরকারী ঘর পাওয়ার যোগ্য হয়ে ও তিন দফায় সরকারী ঘর হলেও আজও তার ভাগ্যে জোটেনি একটি সরকারী ঘর।
রহিমা বেগম জানায় “মোর ছেলে-মেয়ে থেকেও নাই বিশ বছর ধরি একলায় একলায় এই ধাপরিত থাকোং। মানুষে থাকির জন্যে এইকনা করিদিছে। তিন ছেলে থাকিও নাই কাও পুষে না মোক। বড় ছেলে ঢাকায় রিকশা চালিয়ে কোন রকম পরিবার চালায়। মেজো ছেলে চায়ের দোকানে কাজ করে। এক ছেলে ভুগছেন মরনব্যাধি নিয়ে। আর ছোট ছেলে যদিও কিছু দিতো একবছর ধরে করোনার কারনে তারও সংসার চলে না আর। আর বড় ছেলের মা মরা মেয়ে টাকে মোর কাছত দিয়ে গেছে। চেয়ারম্যান একনা বয়স্ক ভাতা করিদিছে তাও কোন বার টাকা পাং কোন বার না পাং তা মুই চলবার পাং না।
ঝড়ির দিনোত (বৃষ্টির সময়) থাকির সমস্যা হয়। সরকার কত কিছু দিয়ার নাগছে, মোক তা কই কি দেয় বাহে”।কত কষ্ট করি রাইত কাটাং।
সীমাহীন ব্যাথা আর কষ্ট ভারাক্রান্ত মনে চোখ মুছতে মুছতে কথা বলছিলেন, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মুনসীর বাজার এলাকার তিস্তা পাড়ের রহিমা বেগম (৮০) বিশ বছর থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে সে। নিজের বলতে কিছুই নেই।
খড়ের বেড়া আর ফুঁটা টিনের ছাপড়া ঘরে বসবাস বৃদ্ধা রহিমা বেগমের। তিনি জীবিকার তাগিদে সারাদিন ঘুরেন অন্যের দুয়ারে দুয়ারে। বার্ধক্য বয়সে হারভাঙা পরিশ্রম করে জরাজীর্ণ বসতঘরে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে তার।নজনপ্রতিনিধিরা রাখেনা খোঁজ, আজও তার ভাগ্যে জোটেনি স্বপ্নের সেই ঘরটি। এলাকা বাসীর সহযোগীয় তৈরী করে দেয়া ঝুপড়িতে কোন রকম রাত যাপন করেন তিনি।
ওই এলাকার কালু নামে এক দিন মজুর কৃষক জানান, ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি হাত পেতে কোন রকম চলেন,
মানুষের বাড়িতে ঘুরে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকম চলেন। এখন আর ভালো করে কানে শুনতে পারে না। এক প্রকার শ্রবনপ্রতিবন্ধী তিনি।
তাই আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাই এনাকে যাতে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে তুষভান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান নুর ইসলাম আহমেদ জানান, এ অসহায় বৃদ্ধা সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে করি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, রহিমা বেগমের খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।