শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন

রংপুরে চাঞ্চল্যকর খুনের শিকার কৃষক শরিফের পরিবার নিরাপত্বাহীনতায়

রংপুরে চাঞ্চল্যকর খুনের শিকার কৃষক শরিফের পরিবার নিরাপত্বাহীনতায়

 

রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়িহাটে প্রকাশ্যে বল্লম দিয়ে কুপিয়ে কৃষক শরিফ মিয়া হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার মা সহ পরিবারের লোকজন। এসময় তারা অভিযোগ করেন, আসামী রফিকুলের হুমকি ধামকিতে নিরাপত্বাহীনতায় এখন পরিবারের প্রতিটি সদস্য। বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই দাবি জানানো হয়।সংবাদ সম্মেলনে খুনের শিকার বৃদ্ধা মা সোবেদা বেগমের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার পুত্র আশরাফুল ইসলাম। এসময় অপর পুত্র একরামুল ইসলাম, খুনের শিকার পুত্র শরিফের স্ত্রী রেজিনা বেগম, নাতি লিটন খান, মিলন খান ও শিউলি বেগম, কন্যা নারজিনা বেগম, পুত্রবধু হাওয়া বেগম,আম্বিয়া বেগম সহ্য পরিবারের লোকজন।সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, জমিজমার বিরোধ নিয়ে ২৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে রাত আনুমানিক আট ঘটিকায় রংপুর জেলাধীন গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়িহাটে শরিফ মিয়া (৫২) কে চায়ের দোকানে চা পানরত অবস্থায় বল্লম দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে চরইশরকুল গ্রামের নেছাব উদ্দিনের পুত্র চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি রফিকুল ইসলাম (৪৫)সহ ৩৪/৩৫ জনের মতো দৃর্বৃত্ত। এ ঘটনায় নিহতের ভাই এমদাদুল হক বাদি হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় পুলিশ ১৯-০৯-১৬ তারিখে আদালতে রফিকুল ইসলামসহ ১৮ জনের নামে অভিযোগ পত্র দেন। আদালতের বিচারক সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শেষে আগামী ২৯ মে ২০২২ ইং মামলাটির আর্গুমেন্ট এর তারিখ ধার্য্য করেছেন।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চার্জশিটভূক্ত ১ নং অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম একজন মাদকব্যবসায়ি ও সাজাপ্রাপ্ত আসামী। তার নামে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ থানায় ২৯-০৬-১২ তারিখে ২৯ বোতল ফেন্সিডিল ও ৫ গেজি গাজা উদ্ধারের মামলা হয় (নং২১, কপি সংযুক্ত)। ওই মামলায় লালমনিরহাটের স্পেশাল ট্রাইবুনাল জজ-৪ এর বিচারক গত ০৬-০২-১৭ তারিখে দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন ( কপি সংযুক্ত)। সেই মামলায় জামিন না নিয়ে আমার সন্ত্মান হত্যাকারী রফিকুল প্রকাশ্যে পুলিশের সাথে সখ্যতা রেখে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও তার নামে ৩০-০৪-২০০৩ ইং তারিখে গঙ্গাচড়ার জয়রামওঝা এলাকার আমজাদ হোসেনের স্ত্রী নারজিনা বেগমকে ধর্ষনের অভিযোগে মামলা হয় (নং নারী শিশু ৪১১/০৩, কপি সংযুক্ত)। নারজিনার পরিবারের অভিযোগ ছিল মামলার পর ওই গৃহবধু নারজিনাকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করে রফিকুল। এছাড়াও রফিকুল ভুরারঘাট এলাকায় চাঞ্ছল্যকর ৮৪ টুকরা করে এক ব্যক্তিকে হত্যা মামলার এজহারভূক্ত আসামি।
সংবাদ সম্মেলনে মা সবেদা বেগম বলেন, মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরম্ন হওয়ার পর থেকে নানাভাবে রফিকুল আমাকে এবং আমার অন্য সন্ত্মান এবং মামলার সাক্ষীদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। এরমধ্যে রফিকুল আমার পঞ্চম পুত্র একরামুল হককে রাস্ত্মায় পেয়ে হুমকি দেয় এবং বলে মামলায় রায় যদি আমার বিপক্ষে যায় তাহলে তোকেও তোর ভাইয়ের মতো মেরে ফেলবো। ঘটনাটি জানিয়ে আমার পুত্র একরামুল হক গত ২৪-০৫-২২ তারিখে গঙ্গাচড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। তার পরেও পুলিশ কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে আসার সময়ও হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বয়োবৃদ্ধ মা আরও বলেন, শুধু তাই নয়, মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে মামলার বাদি আমার তৃতীয় পুত্র এমদাদুল হককে হুমকি ধামকি এবং আর্থিক প্রলোভোনে নিজের কবজায় জিম্মি করে রেখেছে। এছাড়াও মামলার সাক্ষী আমার চতুর্থ পুত্র আশরাফুল, পঞ্চম একরামুল, ৬ষ্ঠ পুত্র এনামুলসহ চার বোন এবং অন্যান্য সাক্ষীদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এখন পর্যন্ত সেই হুমকি ধামকি অব্যাহত আছে। এছাড়াও রফিকুল এলাকায় প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন পুলিশ, আইন আদালত আমি কিনে নিয়েছি। আমার কিছুই হবে না। মামলা থেকে খালাস পেয়ে এসে আমাদের পরিবারের সবাইকে আমার দ্বিতীয় পুত্র শরিফ মিয়ার মতো বল্লম ও তীর দিয়ে মেরে ফেলবে।
এই মা অভিযোগ করে বলেন, মামলার আর্গুমেন্ট এবং রায়ের দিস যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আসামি রফিকুল আমাদেও জীবন দূর্বিসহ করে তুলেছেন। আমার হত্যাকান্ডের শিকার পুত্র শরিফের স্ত্রী সন্তানসহ আমাদের পরিবারের সবাই নিরাপত্বাহীনতায় ভুগছি। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও যে ব্যাক্তি জামিন না নিয়ে পুলিশের সাথে সখ্যতা রেখে এলাকায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারে এবং মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসতে পারে। তাতে আমরা মনে করি তিনি প্রভাবশালী। প্রশাসন তাকে সমিহ করে চলে। সেকারণে আমরা আরও বেশি উদ্বিগ্ন।সংবাদ সম্মেলনে মা সোবেদা বেগম প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্টমন্ত্রী, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও গঙ্গাচড়া থানার ওসির কছে হত্যাকান্ডের শিকার পুত্র শরিফের স্ত্রী সন্তানসহ অন্য সন্তান ও তাদের পরিবারের নিরাপত্বা দাবি জানিয়ে বলেন, অর্থের জোড়ে কোনভাবেই যেন রফিকুল আমার পুত্র হত্যার মামলাকে প্রভাবিত করতে না পারে। আমরা যেন ন্যায় বিচার পাই। রফিকুলসহ জড়িতদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়।

আপনার স্যোসাল মাধ্যমে শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 teestasangbad.com
Developed BY Rafi It Solution