জবি প্রতিনিধি:
পেশাগত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপির মাধ্যমে নিন্দা জানানো হয়।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গোপনে সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ- এর একান্ত সচিবের কক্ষে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তুলছিলেন।কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর নথি সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষ যেখানে সাধারণত অপেক্ষমান দর্শনার্থীরা অবস্থান করেন, সেখানে ফেলে রাখা দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার শামিল। প্রশ্ন জাগে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর গোপনীয় নথি তারা কিভাবে অনিরাপদে রাখলেন? ফলে স্পষ্টত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ হয় দায়িত্বে অবহেলা করেছেন অথবা তাদের উথ্বাপিত দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে জনমনে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া একজন সাংবাদিক কোন অন্যায় করলে তাকে তাৎক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ না করে প্রায় ০৬ ঘন্টা মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে আবদ্ধ রেখে নির্যাতন করা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবাদলিপিতে। পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনায় দায়ী ব্যাক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা ও একই সাথে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম-কে আইনগত সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে। এদিকে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ‘তথ্য চুরির’ অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন, হয়রানি ও পরবর্তীতে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জবিসাস)। বৃহস্পতিবার সংগঠনের আহ্বায়ক লতিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা এই প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানান।
পেশাগত দায়িত্ব পালন ও তথ্য সংগ্রহের সময় সংবাদকর্মীর ওপর এহেন ন্যাক্কারজনক হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের লাগামহীন দুর্নীতি, নিয়োগে অনিয়ম, করোনাকালীন দূর্নীতিসহ সার্বিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যে সংবাদগুলো প্রকাশ করেছেন তার ফলশ্রুতিতেই তিনি এই ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সংবাদকর্মীদের ওপর এহেন নির্মম ও ন্যাক্কারজনক হয়রানি এক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মারমুখী রূপ।
এরই মাধ্যমে বাক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ ও সংবাদমাধ্যমের উপর ছড়ি ঘোরানোর পায়তারা করছেন এক শ্রেণীর আমলারা। জানা যায়, গত ১৭ মে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সহকারীর কক্ষে পাঁচ ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়। এরপর রাত ৯টার দিকে সচিবালয় থেকে পুলিশ পাহারায় শাহবাগ থানায় নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি নথি সরানো ও ছবি তোলার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। আদালতে রিমান্ড চাওয়া হলে তা নাকচ করে পরবর্তীতে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের শর্তহীন মুক্তি, তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং তাঁকে নির্যাতন ও হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।